শিরোনাম: |
আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকরা হবেন ‘নন-ক্যাডার’
নূরুজ্জামান মামুন
|
![]() জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গত রবিবার আজকালের খবরকে বলেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজে শিক্ষকদের নন-ক্যাডার মর্যাদা দিয়ে বিধিমালা করা হয়েছে। পিএসসির (পাবলিক সার্ভিস কমিশনের) মাধ্যমে বিভাগীয় পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন তারা ক্যাডার মর্যাদা পাবেন। তবে অন্য কলেজে বদলি হতে পারবেন না। বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, মামলা আর আন্দোলন করে মর্যাদা পাওয়া যায় না। কারও অধিকার খর্বও করা যায় না। এজন্য মামলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের মর্যাদা হবে ক্যাডার নয়, নন-ক্যাডার। তবে সরকারি কলেজের সমপর্যায়ের শিক্ষকদের মতোই বেতন ভাতা পাবেন। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের অধ্যক্ষরা সহকারী অধ্যাপকের পদমর্যাদা প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের পর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সরকারি অর্ডার (জিও) জারি করা হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়ার শঙ্কা করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় শীর্ষ কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয় ও সমিতির অনুমতি না নিয়ে মামলা করায় এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব শাহেদুল খবির জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা না দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেছেন। অন্যদিকে ক্যাডার মর্যাদা না পেলে আগের একাধিক রেফারেন্স টেনে মামলা করার কথা জানিয়েছে সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা জানতে চেয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতামতে জন্য পাঠানো হয়। তবে পিএসসি কোনো মতামত না দিয়ে এ ব্যাপারে সচিব কমিটির মতামত চায় পিএসসি। বিষয়টি স্বীকার করে পিএসির চেয়ারম্যান ড. সাদিক বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মতামত নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। সরকার যেভাবে মতামত আমরা সেভাবে তাদের নিয়োগ দিবো। সচিব কমিটির মতামতের জন্য পাঠিয়েছি। জাতীয়করণের অপেক্ষায় থাকা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম আজকালের খবরকে বলেন, আমাদের কাছে কোনো কাগজপত্র না আসায় এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমাদের দাবি, একই প্রতিষ্ঠানে ক্যাডার-নন ক্যাডার থাকলে তা শ্রেণি বৈষম্যর সৃষ্টি হবে। ১৯৮১, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালের বিধিমালা অনুযায়ী আত্তীকৃত শিক্ষকরা ক্যাডার মর্যাদা পেয়ে আসছেন। তাই নতুন জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের কোনোভাবেই নন-ক্যাডার ঘোষণা করা যাবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পর আমরা আইনীসহ অন্যান্য পদক্ষেপের বিষয়ে ভাববো। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি। বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার আজকালের খবরকে বলেন, নিয়মিত বিসিএসের বাইরে কাউকে ক্যাডার মর্যাদা দেওয়া যাবে না- এটা আমরা বলে আসছি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের নন-ক্যাডার মর্যাদা দেওয়ার দাবি আমরা করে আসছি। তিনি বলেন, সরকারের বিধি বিধান মোতাবেক সব কিছু হওয়া উচিত। এখানে দুই পক্ষকে খুশি করার কোনো বিষয় নেই। এসব কলেজ জাতীয়করণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাজেটে ৯৭৬ কোটি ৩৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কলেজ জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ না রাখায় পুরো প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লো। কারণ এটি বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট। জানা গেছে, ২০১০ সালে সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০১টি কলেজ জাতীয়করণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মাউশির কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। কলেজের সব সম্পদ সরকারকে ডিট অফ গিফট করে দেওয়া হয়েছে। তবে জিও জারি না হওয়ায় চূড়ান্ত তালিকায় থাকার পরও অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি সুবিধা না পেয়েই অবসরে চলে যাচ্ছেন। তবে তিনটি কলেজের জিও জারি হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকৃত করা হয়নি। আর ৬০টি কলেজ জাতীয়করণ নিয়ে মামলা চলছে। এর মধ্যে ১০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ৩০১টি কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছে ১২ হাজার ৫৫৬ জন আর নন-এমপিও আছেন ৪৪৬৫ জন। প্রসঙ্গত, আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণা করে বিধিমালা জারির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও সমিতির মহাসচিব শাইদুল খবির ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেন। রাষ্ট্রকে বিবাদী করায় জাতীয়করণের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা পক্ষভুক্ত হন। আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় সরকারিকরণের জিও জারি নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সচিব মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মামলা থাকায় শেষ পর্যন্ত কী হবে তা বলা মুশকিল। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কলেজ সরকারি করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না। আজকালের খবর/এসএ |