শনিবার, ২৬ এপ্রিল, 2০২5
তারা ফেসবুক-ইউটিউব-হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার- ইমু চালায় ভারতীয় সিমে
মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
Published : Saturday, 15 March, 2025 at 3:42 PM

তারা ফেসবুক-ইউটিউব-হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার- ইমু চালায় ভারতীয় সিমেভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা-আখাউড়া ও বিজয়নগর এই তিন উপজেলার গ্রামগুলোতে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল সিম কার্ড। এতে করে সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েছে কয়েকগুন। এছাড়া অবাধে ভারতীয় মোবাইল সিমের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমান রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সচেতন মহল। তারা সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোকে দেশীয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। 

জানা যায়, কসবা উপজেলার, গোপীনাথপুর, ধজনগর, বায়েক, কোল্লাপাথর, মাদলা, খাদলা, বেলতলি, পুটিয়া। আখাউড়া উপজেলার সীমন্তবর্তী উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর, রাজাপুর, আমোদাবাদ, কল্যাণপুর, দক্ষিণ ইউনিয়নের বঙ্গেরচর, কালিকাপুর, সেনারবাদী, বাউতলা, গাজীর বাজার, উমেদপুর, মনিয়নন্দ ইউনিয়নের তুলাই শিমুল, কর্মমঠ, গঙ্গাসাগর, শিবনগর ও ঘাগুটিয়া। বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল, মেরাসানি, কাশিনগর, বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, আউলিয়া বাজার, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, হরষপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে ভারতীয় সিমকার্ডে চলে ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল কার্যক্রম। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গ্রাম ও বাজার গুলোতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা স্মার্ট ফোন নিয়ে তরুণদের গল্প, আড্ডা বেশ জমজমাট লক্ষ্য করা যায়। তাদের এই মোবাইল ফোনগুলোতে বাংলাদেশী মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংক, রবি, গ্রামীনফোন, এয়ারটেল ও টেলিটক মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুলোর কোনো সিম কার্ড নেই। তরুনেরা মোবাইল ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা না পেয়ে ভারতীয় মোবাইল ফোনের সিম কার্ড যেন তাদের কাছে শেষ ভরসা। 
কসবা সীমান্ত অঞ্চল ঘুরে পুটিয়া সীমান্তবর্তী খাদলা বাজারে দেখা মেলে একদল তরুণের। তারা গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমু ও ইন্টারনেট ভিত্তিক ফ্রি-ফায়ার, পাবজির মতো গেইমও খেলছেন ভারতীয় মোবাইল কোম্পানির এয়ারটেল, জিও, ভোডাফোন, রিলায়েন্স, এয়ারসেল, টেলিনসহ বিভিন্ন কোম্পানির সিম দিয়ে।

স্থানীয় সচেতন গ্রামবাসী জানায়, ভারতীয় সিমের অবাধ ব্যবহারের কারণে সীমান্তের উপারে ভারতীয় চোরাকারবারীদের সাথে বাংলাদেশের চোরাকারবারী ও মানব পাচারকারীরা মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। চালাচ্ছেন মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। এতে করে সীমান্ত অঞ্চলে অপরাধ প্রবনতা বাড়ছে। 

তবে ভারতীয় মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহারকারী বাংলাদেশী নাগরিকেরা জানান, বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানীগুলোর নেটওয়ার্ক না থাকায়, তারা বাধ্য হয়েই সেখানকার সিম কার্ড ব্যবহার করছেন।

কসবা পুটিয়া সীমান্তবর্তী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরমান মিয়া বলেন, খাদলা, মাদলা, পুটিয়া, বেলতলি এসব এলাকায় বাংলাদেশী নেটওর্য়াকের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যার কারণে আমরা আমাদের আতœীয়  স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ড ব্যবহার করছি। এই সিম কার্ড ব্যবহার করলে বিজিবিও আমাদের মাঝে মধ্যে হয়রানি করেন। বর্তমান সরকার যদি আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওর্য়াকের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে আমরা অনেকটা উপকৃত হতাম। 
সীমান্তের আরেক বাসিন্দা ইকবাল মিয়া বলেন, আমাদের এই এলাকার আশে-পাশে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি বা অন্য কোনো সিম কার্ডের নেট পাওয়া যায় না। তাই আমরা ভারতীয় এয়ারটেল, জিও, ভোডা এই সিমগুলো ব্যবহার করি। আমাদের এই গ্রামের মধ্যে কোনো সিমেরই টাওয়ার নাই। আমরা যদি বাংলাদেশের নেট পেতাম, তাহলে আমরা ভারতের সিম ব্যবহার করতাম না। আমাদের দাবী এই এলাকায় যেন বাংলাদেশী মোবাইল নেটওর্য়াক দেয়া হয়। 

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি আবদুন নূর বলেন, জেলার আখাউড়া, কসবা ও বিজয়নগর সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় নেটওর্য়াক চালু থাকার ফলে এলাকার লোকজন ভারতীর সিম ব্যবহার করছেন। সেজন্য এই সব এলাকার অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তাছাড়া এই সব এলাকায় অপরাধ হলে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে শনাক্ত করতে পারছে না। এই সুযোগে সীমান্তে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্ম বেড়েই চলেছে। ভারতীর সিম ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের মোবাইল ভিত্তিক রাজস্ব অনেকটাই কমছে।। 

তিনি বলেন, জনস্বার্থে আমি দাবী জানাবো যে, এইসব এলাকায় আমাদের দেশীয় মোবাইল সিম কোম্পানীর মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করার জন্য। এতে অপরাধ প্রবণতা কমে আসার পাশাপাশি দেশের রাজস্বও বাড়বে। 

এ ব্যাপারে বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জিয়াউর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ আমরা নেয়া শুরু করেছি। আমাদের দেশের যে নেটওর্য়াকগুলো আছে তাদেরকে বলেছি, এই এলাকায় তাদের নেটওর্য়াট উন্নত করার জন্য। যাতে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের অন্য দেশের সিম কার্ড ব্যবহার থেকে যেন বিরত থাকেন। তারা পরিকল্পনা করছে নেটওর্য়াক আরো উন্নত করার জন্য। 

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, আমরা বিষয়টি শুনেছি। আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে, সেখানকার বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ভারতের সিম ব্যবহার করছে। সেখানে রাজস্বেরও একটা বিষয় আছে। তাছাড়া আরো বড় সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে শনাক্ত করতে পারছে না। এই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা অবনতির একটি বিষয় আছে। যার কারণে চোরাচালান বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা বিটিআরসি'র সাথে কথা বলে এই ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪, হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০১-৩
ই-মেইল : [email protected], [email protected], Web : www.telelink-bd.com