রবিবার, ১৯ মে, 2০২4
চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Wednesday, 24 April, 2024 at 3:18 PM, Update: 24.04.2024 3:49:01 PM

চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্নঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ঈহা অবাপ্তির। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে যানজটে আটকে পড়া গাড়ি থেকে তার মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় ইহার বাবা আনোয়ার পারভেজ বাদি হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। ওই ঘটনার প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

আনোয়ার পারভেজ জানান, প্রায় ৫০,০০০ টাকা দাম ছিল মোবাইল ফোনটির। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো- মোবাইলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। এ কারণেই মোবাইলটি উদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তিন মাসেও সেটি উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকে আপডেট কোনো তথ্যও জানানো হচ্ছে না।

আধুনিক জীবনে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব রয়েছে। যোগাযোগের অন্যতম প্রধান উপকরণ ছাড়াও অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই বহুমাত্রিক কাজ করে থাকেন। ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তও সংরক্ষণ করা হয় মোবাইল ফোনে। অনেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যও করে থাকেন। তবে মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তা উদ্ধারে আগ্রহ দেখায় না। বড় বড় ঘটনায় ব্যস্ততা দেখিয়ে মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার বিষয়টি পাত্তাই দেওয়া হয় না।

পুলিশের তথ্য 
শুধু জানুয়ারি মাসেই  সারা দেশে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া ফোনের একটি বিস্ময়কর সংখ্যা প্রকাশ করেছে সরকারি পরিসংখ্যান।

তবে সেখানে মোবাইল ফোন উদ্ধারের হার অত্যন্ত কম। একটি ক্ষুদ্র অংশই তাদের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন ফিরে পেয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনায় ২৯,৫৫৩টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নথিভুক্ত হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৮টি। হারানো মোবাইল ফোনের সংখ্যা ২৯,৭১১টি। 

জানুয়ারি মাসে মাত্র ৬,০৫৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৬,৮৪৩টি মোবাইল ফোন হারানোর জিডি ও ১৭টি মামলার ঘটনায় ৮৫৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ২,৩৭২টি মোবাইল ফোন হারানোর জিডির ঘটনায় ৩২৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার, খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩১৬টি জিডির ঘটনায় ৫৮টি মোবাইল উদ্ধার, রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায় ২২৪টি মোবাইল ফোন হারানোর জিডির ঘটনায় ৩৮টি মোবাইল উদ্ধার, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৬৯টি মোবাইল ফোন হারানোর জিডির ঘটনায় ৭১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার, সিলেট মেট্রোপলটন এলাকায় ৬১৮টি মোবাইল ফোন হারানোর জিডির ঘটনায় ৪৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৬০টি জিডির ঘটনায় ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার, গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১,০৭৫টি জিডির ঘটনায় মাত্র ৬৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।

আমলাতান্ত্রিক বাধা

মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই ছিনতাই বা চলতি পথে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরাও অনেক সময় ঝামেলা এড়াতে সরাসরি মামলা করতে চান না। আবার থানায় গেলে পুলিশও মামলা না নিয়ে হারানোর জিডি করতে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

এছাড়া অনেকেই মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার পর মামলা বা জিডিও করতে চান না। মামলার ক্ষেত্রে খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার, আদালতে অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু জিডির ঘটনায় এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় না।

পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়া এবং উদ্ধারে পুলিশের অনীহার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

ওই সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘মোবাইল ফোন হারানোর সংখ্যাকে যদি সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়- তাহলে সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোন হারানোর যে পরিমাণ জিডি করা হয়েছে- তার তুলনায় সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা খুবই কম।’’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বৈঠকে মোবাইল ফোন উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে এবং চুরি হওয়া ফোন বিক্রির স্থান চিহ্নিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলো আগে মোবাইল ফোনের দোকানে বিক্রি করা হতো। সেই দোকান থেকে সেগুলো আবার সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ সেসব মোবাইল ফোনের অবস্থান ও ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে উদ্ধার করতো। এখন দামি ফোনগুলোর পার্টস খুলে বিক্রি করা হয়। এজন্য চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার কম হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা সম্প্রতি কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকসহ একটি চক্রের বেশ কয়েকজকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, যারা দেশে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলো পাশের দেশে নিয়ে বিক্রি করতো। আর পাশের দেশে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন বাংলাদেশে এনে বিক্রি করতো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে চোরাই মোবাইল ফোনগুলো এপাড়-ওপাড় করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘‘একটি চুরি-ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার আর একটি খুনের মামলা ডিটেকশন করতে প্রায় একই সময় লাগে।”

তিনি বলেন, ‘‘বড় অপরাধের রহস্য সমাধানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর চাপ থাকে। হারিয়ে যাওয়া ফোন জড়িত মামলাগুলো প্রায়ই কম অগ্রাধিকার পায়। তবে মোবাইল ফোন হারানোর জিডি বা মামলা যদি হয়- আর যদি সেটি খোলা থাকে, তাহলে অবশ্যই তা উদ্ধার করা যাবে।”
আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪, হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০১-৩
ই-মেইল : [email protected], [email protected], Web : www.telelink-bd.com